নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের এক হাজারেরও বেশি কেন্দ্রে চলছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচি। দেশব্যাপী শুরু হওয়া টিকাদানের প্রথমদিনে রোববার দিন শেষে সারাদেশে মোট টিকা পেয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে টিকা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭১ জন। এ তথ্য জানিয়েছেন,ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান। এ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ১০ দিন পর।
সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত নিবন্ধিত ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হয়।প্রথম দিন সারাদেশে ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রেখেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ কর্মসূচির প্রথম দিনে দেশের উচ্চ-আদালতের বিচারপতি, মন্ত্রী-আমলা, সশস্ত্র বাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিকা নিয়েছেন। রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিজে টিকা নেয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, টিকাবিরোধী কোন গুজবে কান না দিতে।
ঢাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ভিডিও কনফরেন্সের মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে গিয়ে টিকা নেন তিনি। এসময় জাহিদ মালেক জানান, কেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিবন্ধন করেও টিকা নেয়া যাবে।
প্রাথমিকভাবে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথমেই টিকা নিয়েছেন বিচারপতি জিনাত আরা হক। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ইনায়েতম রহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আব্দুস সামাদও টিকা নিয়েছেন।
রোববার দিনের শুরুতে প্রধান বিচারপতি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিন্স) ও হাসপাতালে টিকা নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব টিকা নিয়েছেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি কেন্দ্রে।
রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রথম ধাপেই টিকা নিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এছাড়া অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ এখানে টিকা নিয়েছেন।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকা নেওয়ার পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াসেফ ওসমান, মৎস্য ও পশু সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলমসহ চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা টিকা নেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে প্রথম দিন টিকা নিয়েছেন মোট ১৬২ জন।
টিকাদান কর্মসূচির প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন জেলার ৯৫৫টি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে মোট দুই হাজার ১৯৬টি দল কাজ করছে। ঢাকায় ৫০টি হাসপাতালে ৫০টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মোট ২০৪টি দল ঢাকার টিকাদান পরিচালনা করছে। করোনার টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় ১৪ হাজার ৬৮৮ জন ভ্যাকসিনেটর এবং ২৯ হাজার ৩৭৬ জন ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার।
টিকাদান কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকাতে ৫০টি হাসপাতালে ২০৪টি টিম কাজ করছে, সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে দুই হাজার ১৯৬টি টিম কাজ করছে। মোট এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে দুই হাজার ৪০০টিম কাজ করছে।
এ দিকে করোনার টিকা নিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি শুরুর দিনে রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভ্যাকসিন সেন্টারে টিকা নেন তিনি।
টিকা গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সামনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ভালো আছি। কোনো ভয় নেই। দেশবাসীকে আহ্বান করছি, যখনই আপনার তারিখ আসবে টিকা নেবেন। এটা আপনাদের কর্তব্য।’ তিনি বলেন, ‘আমার রিকশাওয়ালা ভাই, যিনি বাড়ির কাজ করেন- সাধারণ মানুষ টিকা পাওয়ার যেন সুবিধা পায়। সাধারণ মানুষেরই এই টিকাটা বেশি দরকার।
ডা. জাফরুল্লাহ আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি এখানে এসে টিকাটা নিয়ে যান, তাহলে দেশবাসী আরো বেশি সাহস পাবে। এ টিকা প্রত্যেকের। আমার রিকশাওয়ালা ভাই, বাড়ির কাজ করেন, সাধারণ মানুষ যেন টিকা পাওয়ার সুবিধা পায়।
এ সময় বিএসএমএমইউর ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন ডা. জাফরুল্লাহ। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির সব কর্মীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান তিনি।