নিজস্ব প্রতিবেদক:
নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ‘নাতি’ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মালিক,পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে গণভবনে তার অবাধ যাতায়াত,দেশের মন্ত্রী, এমপিসহ প্রভাবশালীদের সঙ্গে রয়েছে তার বহু ছবি। এমন ভুয়া পরিচয় দিয়ে মানুষদের চাকরি দেয়া এবং বিদেশ পাঠানোর কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে এ প্রতারক চক্র কোটি কোটি টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও গত ২৪ অক্টোবর ধানমন্ডি থানার একটি মামলার ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের মূল হোতা আলী হাসান আসকারিকেসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
আটককৃতরাহল- নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী (৪৮), রাশেদ ওরফে রহমত আলী ওরফে রাজা (৩৪), মীর রাকিব আফসার (২০), সজীব ওরফে মীর রুবেল (৩৩), আহম্মদ আলী (৩৮) ও বরকত আলী ওরফে রানা (৩২)।
এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নবাব পরিবারের অ্যাম্বুশ সিল, ওয়াকিটকি সেট, ভিওআইপি সরঞ্জাম, ল্যাপটপ, একাধিক মোবাইল, সিমকার্ড, মেডিক্যাল রিপোর্ট ও পাসপোর্টের কপি ও বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির লিফলেট উদ্ধার করা হয়।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপকমিশনার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও গত ২৪ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় হওয়া মামলার ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের মূল হোতা আলী হাসান আসকারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আলী হাসান মাউন্ট এলিজাবেথের মালিক সেজে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অন্তত ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভুক্তভোগীরা ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের। আলী হাসান গ্রেপ্তারের পর প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা টাকা ফেরত পেতে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন।
প্রতারণার শিকার ও মামলার বাদী ফেনীর স্কুলশিক্ষক আবদুল আহাদ সালমান বলেন, ‘গত মে মাসে আলী হাসান আসকারি তাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। আলী আসকারি নিজেকে নবাব সলিমুল্লাহর নাতি বলে পরিচয় দেন। মন্ত্রী, এমপি, শিল্পপতিসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ছিল তার ছবি।’
সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথের সামনে তার নিয়োগ করা কর্মীদের সঙ্গে ব্যানারসহ ছবিও ছিল। পরে আলী হাসান তার সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের মধ্যে দেখা হয়। এক পর্যায়ে আলী হাসান বলেন, মাউন্ট এলিজাবেথে তিনি ৪০০ জনকে বিনা খরচে চাকরি দিতে চান। তবে প্রত্যেকর শারীরিক পরীক্ষার জন্য ৮০০ টাকা ও চিকিৎসা সনদের জন্য ৭৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে।
আবদুল আহাদ বলেন, ‘আলী হাসানের কথায় মুগ্ধ হয়ে তিনি ফেনীর ৪০০ দরিদ্র যুবকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আলী হাসানের হাতে তুলে দেন। এরপর থেকেই আলী হাসান লাপাত্তা। তার সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে মাউন্ট এলিজাবেথের সামনের ব্যানারের ছবিতে থাকা সিঙ্গাপুরের একটি নম্বরে ফোন করলে সেখান থেকে বলা হয়, আলী হাসান তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। পরে তিনি ধানমন্ডি থানায় আলী হাসানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন।
আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে উপকমিশনার মাহফুজুল ইসলাম জানান, এই চক্রটি ১০ কোটি টাকার বেশি প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারক চক্রের প্রধান নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী নিজেকে নবাব সলিমুল্লাহ খাঁনের নাতি হিসেবে পরিচয় দেন।