নিজস্ব প্রতিবেদক:
গত ১৭ আগস্ট কাপড় ব্যবসায়ী আজাহার আলী পুরান ঢাকার ইসলামপুরে যাচ্ছিলেন কাপড় কিনতে। যানজটের কারণে তিনি বাস থেকে রায়সাহেব বাজার মোড়ে নেমে হাঁটা শুরু করেন। জজকোর্ট এলাকা পার হতেই একদল লোক তাকে ঘিরে ধরে। নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মামলা রয়েছে জানিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। হয়রানি এড়াতে আজাহার তাদের ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পান।
দিনদুপুরে ওই ঘটনার পর ব্যবসায়ী আজাহার থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, ডিবি পরিচয়ে একদল দুর্বৃত্ত ওই ব্যবসায়ীর টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। আপন দুই ভাই মো. সুমন আর জাকির হোসেন এই দুর্বৃত্ত দলের প্রধান।
তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। এই দলে মোট ১১ সদস্য রয়েছে। তারা ভয়ংকর অভিযানে নিজেদের ডিবির নানা স্তরের কর্মকর্তা পরিচয় দিত।
এরপর কোতোয়ালি থানা পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই অপরাধী গ্রুপের ১১ সদস্যকেই গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ী আজাহারের কাছ থেকে নেওয়া টাকার মধ্যে ১৫ হাজার টাকা, গোয়েন্দা পুলিশের ব্যবহূত নকল জ্যাকেট আর একজোড়া হাতকড়াও উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, দুই ভাইয়ের এই অপরাধী চক্র ২০১৫ সাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপহরণ, গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অপকর্ম করে আসছিল।
এই দলের দুই থেকে তিন সদস্য প্রথমে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে। এরপর নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মামলা আছে বা অন্য কোনো ভয় দেখিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিতে চায়। গ্রুপের অন্য সদস্যরা তখন ঘটনাস্থলটি ঘিরে রাখে, যাতে পথচারীরা কিছু বুঝতে না পারে।
পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার সাইফুল আলম মুজাহিদ বলেন, গ্রেপ্তারের পর ওই ১১ জন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা দিনে অন্তত ১০ থেকে ১৫টি টার্গেট ঠিক করে মাঠে নামে। এভাবে ভুয়া ডিবি পরিচয় দিয়ে মাসে অন্তত ১৫টি অভিযানে সফল হতে পারে তারা।
অর্থাৎ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। নিজেদের কোনো মাইক্রোবাস না থাকলেও কথিত অভিযানের সময় আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাইক্রোবাস দেখিয়ে সেটিতেই তাদের তুলে নেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
তিনি বলেন, এই চক্রে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে দুলাল। সে প্রতিদিন ভোর ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে সবাইকে ফোন দিয়ে নির্ধারিত জায়গায় একত্রিত হয়। এরপর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কথিত অভিযানে নামে। তারা মিরপুর, গাবতলী, মাজার রোড, কল্যাণপুর, যাত্রাবাড়ী, নর্দা, উত্তরা, আজমপুর, বিমানবন্দর এলাকা, গুলিস্তান, বংশাল, তাঁতীবাজার, সদরঘাট ও কোর্ট-কাচারি এলাকায় সক্রিয় থাকে।
পুলিশ জানায়, এই অপরাধী চক্রের অন্য সদস্যরা হলো- মো. ইকবাল, আমির হোসেন, সরোয়ার হোসেন ওরফে সরোয়ার খাঁ, সোহাগ খান, রমজান, ইমন ওরফে কাজল দে, নাসির হাওলাদার, মো. দুলাল ও আনোয়ার গুলদার। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ইকবাল ও আমির ভায়রাভাই। এ চক্রের বেশিরভাগ সদস্যই এক সময় ডাকাতি, ছিনতাই ও মলম পার্টিতে ছিল।
ওই ধরনের অপরাধ এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন প্রতারণার পথে নামে তারা। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে।